ট্রাম্পের ধর-পাকড় আর বহিষ্কারের আতংকে

অভিবাসীরা উপার্জিত অর্থের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠাচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি   প্রিন্ট
সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

অভিবাসীরা উপার্জিত অর্থের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠাচ্ছেন

রেমিট্যান্সের গতি-প্রকৃতি।

আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ নিজ দেশে অর্থ প্রেরণের হার ৮% বেড়েছে। সরকারী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বখ্যাত ‘নিউজউইক’ সংবাদটি প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের দিন তথা গত ২০ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৮ মাস ১১ দিনে ৪ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। একইসময়ে আরো ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসী ট্রাম্পের এই অভিযানের আতংকে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। আর এমন একটি ভীতিকর পরিস্থিতির কারণেই অবৈধভাবে বসবাসরতরা অর্জিত অর্থের প্রায় সবটাই নিজ দেশে পাঠাচ্ছেন। এমনকি সহায়-সম্পত্তি অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে সেগুলোও দ্রুত বিক্রি করে সমুদয় অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। প্রকাশিত সংবাদে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ল্যাতিন আমেরিকায় ১৬১ বিলিয়ন ডলার প্রেরণ করেছেন প্রবাসীরা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তা ৮% বেশী। এটা হচ্ছে বৈধপথে পাঠানো রেমিট্যান্স। এর বাইরে হুন্ডি তথা অবৈধ পথেও পাঠাচ্ছেন অনেকে। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ‘দ্য মাইগ্রেশন, রেমিট্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’র পরিচালক ম্যানুয়েল ওরোজকো বলেছেন, ‘যে কোন সময় গ্রেফতারের আতংকে থাকা অবৈধ অভিবাসীরা দিন শেষে পারিশ্রমিক/মজুরি হিসেবে যা হাতে পাচ্ছেন তার ৭৫% স্বজনের কাছে পাঠাচ্ছেন’। নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে রেস্টুরেন্ট কর্মী মানিক মিয়া ৫ অক্টোবর এ সংবাদদাতাকে জানান, ২২ বছর যাবত নিউইয়র্কে বাস করছি। এখন পর্যন্ত গ্রীণকার্ড পাইনি। ওয়ার্ক পারমিটে কাজ করতে হচ্ছে। তবুও স্বস্তি পাচ্ছি না। কারণ, আমার মত অনেকে ইতিমধ্যে আইসের (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এজেন্ট) কাছে ধরা পড়েছেন এবং নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সাথে নিতে পারেননি কিছুই। তাই উপার্জিত অর্থের পুরোটাই পাঠিয়ে দিচ্ছি স্ত্রী-সন্তানের কাছে। দিন কাটছে ভয়ংকর একটি অবস্থার মধ্যে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরই পাল্টে গেছে নিউইয়র্ক সিটির চেহারাও। সবকিছু অপরিচিত মনে হচ্ছে।

নিউজ উইকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া প্রভৃতি দেশের অভিবাসীরাই বেশী আতংকে নিপতিত হয়েছেন এবং তারা সবটুকুই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রবাসীদের পাঠানো ৬৫০ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে। আর এ অর্থের ৩৩% পাঠিয়েছেন আমেরিকায় বসবাসরতরা। সবচেয়ে বেশী রেমিট্যান্স হয়েছে মেক্সিকোতে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তমে। গত জুলাই মাসে কংগ্রেসে পাশ হওয়া ‘অ্যা বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী আসছে জানুয়ারি থেকে নন-সিটিজেনদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ১% হারে ট্যাক্স নেয়া হবে। এটিও একটি কারণ সঞ্চিত অর্থ যতটা দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার-মনে করছেন ম্যানুয়েল ওরোজকো। ওরোজকোর মতে ১% ট্যাক্স ধার্যের ব্যাপারটি হুন্ডির প্রতি আকর্ষণ আরো বাড়াবে নন-সিটিজেনদের। তাই ট্রাম্পের ইচ্ছার পরিপূরক ‘অ্যা বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’-টি মূলত: হুন্ডি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে অর্থনৈতিক সেক্টরের লোকজনের মধ্য থেকে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকার কর্র্র্তৃক রেমিট্যান্স’র ওপর প্রণোদনার পাশাপাশি সোনালী এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের ফি বাতিল করা হলেও অন্য সকল দেশে রেমিট্যান্সের ফি সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের কঠোর নীতির সুযোগ রেমিট্যান্স হাউজগুলোও পুরোপুরি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থার অসহায় ভিকটিম ম্যানহাটানের রেস্টুরেন্ট কর্মী ইকুয়েডরের অধিবাসী কেভিন আলভিন বলেন, পারিশ্রমিক হিসেবে যা পাচ্ছি তার প্রায় সবটাই পাঠাচ্ছি। এ অবস্থায় এখানকার খরচ কমিয়েছি। একান্তই প্রয়োজনের জন্যে সামান্য রেখে অবশিষ্ট অর্থ স্বজনকে পাঠাচ্ছি। যাতে ফিরে গিয়ে কিছু একটা করতে পারি নিজ দেশে। ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’র রিসার্চ এসোসিয়েট রুবি ব্লেডোজ গণমাধ্যমে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অবৈধ অভিবাসীদের অবদান অপরিসীম। যারা মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগ ঘটিয়ে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ একটি দেশে পরিণত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। সেই মেধার ক্বদর দিতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন অন্তত: তাদের ব্যাপারে উদারতা প্রদর্শন করা জরুরী যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে। এমনকি কঠোর পরিশ্রমী অবৈধ অভিবাসীরাও আমাদের সমাজের মানুষের উপকারে আসে-এমন কাজও করছেন। তারা ক্রমান্বয়ে এই সমাজের অংশে পরিণত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্ভট চিন্তা-পরিকল্পনায় অভিবাসীগণের সে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে। যা অমানবিকও বটে।

রুবি ব্লেডোজ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, গ্রেফতার আর বহিষ্কারের আতংক দূর হলে অবৈধ অভিবাসীরা রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে নিজ দেশের স্বজনেরা আগ্রহী হবেন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে। এর সুফল পাবে যুক্তরাষ্ট্র। রুবি ব্লেডোজ আরো বলেন, ট্রাম্পের কারণে অনেক মেধাবি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছেন। তারা অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। চীনসহ বেশ কটি দেশ ইতিমধ্যেই মেধাবিদেরকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

Facebook Comments Box

Posted ১০:১২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us