
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
পারভেজ সাজ্জাদ।
বাঙালির স্বাধীনতা-স্বাধিকার আন্দোলন-লড়াইয়ের অভ’তপূর্ব ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে মীরসরাই উপজেলাকে বিশ্বের বুকে বাণিজ্যিক, আত্মনির্ভরশীল ও উন্নত জনপদ হিসেবে পরিচিত করার সংকল্প নিয়ে আসছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসনে (মীরসরাই) বিএনপির প্রার্থী হতে চান নিউইয়র্কের উদিয়মান ব্যবসায়ী এবং তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ’র যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ। নিউইয়র্কে সপরিবারে বসবাসরত পারভেজ সাজ্জাদ শেখ হাসিনার পতনের পর এলাকা পরিভ্রমণ করেছেন। জনসংযোগ করেছেন প্রিয় পরিচিত এলাকার সর্বসাধারণ এবং বিএনপি-ছাত্রদলের সাবেক সহকর্মীগণের সাথে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতা। এরপরও থেমে থাকেননি। হতাশ হননি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্জিত অর্থের বড় একটি অংশ বরাবরই বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এবং এলাকার দু:স্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন এবং এখনও করছেন। করোনাকালিন অর্থ সহায়তার পরিধি শুধু চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। তা বিস্তৃত হয় চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং নিউইয়র্ক অঞ্চলেও। মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায় নেতা-কর্মীদের জন্যে। বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে করোনায় বিপর্যস্ত এলাকাবাসীর ঘরে খাদ্য-সামগ্রি পাঠিয়েছেন। আর এভাবেই হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা সত্বেও পারভেজ সাজ্জাদ মীরসরাইয়ের সর্বস্তরের মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং ভরসার প্রতিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। একইসাথে, তারেক রহমানের নির্দেশ ও নেতৃত্বে অবিচল আস্থা রেখে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে রয়েছেন। ২০০৮ সালে পারভেজ সাজ্জাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ‘তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ’র কার্যক্রমও বিএনপির দুর্দিনে সুদূর এ প্রবাসে সকলের দৃষ্টি কেড়েছে।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেতৃত্ব বেয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারি পারভেজ সাজ্জাদ যুক্তরাষ্ট্রে সর্বস্তরের মানুষের সাথেই সুসম্পর্ক রেখেছেন। মূলধারার নেতৃবৃন্দের সাথেও রয়েছে সখ্যতা।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুবাদে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলাকে আধুনিক একটি জনপদে পরিণত করার স্বপ্নে বিভোর পারভেজ সাজ্জাদ এ সংবাদদাতাকে বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। ইছাখালী, মঘাদিয়া, ও সাহেরখালী ইউনিয়নের সাগর সংলগ্ন চরে এবং আরো জমি নিয়ে সর্বমোট ৩৫ হাজার একর জায়গার উপর দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে-যা “মীরসরাই ইকোনমি জোন” ( সাবেক”বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর”) নামে পরিচিত। এই প্রকল্পকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক জীবন-যাপনের উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে উচ্চ বেতনে কাজের উপযোগী করতে চাই। এজন্যে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া এবং গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানের বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে আমি কাজ করে যাবো।
লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে পারভেজ সাজ্জাদ। ছবি-সংগ্রহ।
মৃদুভাষী রাজনীতিক পারভেজ সাজ্জাদ বললেন, বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে বাস করলেও হৃদয়টা জুড়ে রয়েছে মীরসরাইয়ের মাটি ও মানুষ। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে যাই তাদের কাছে। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই অর্থ সহায়তাও দিয়ে আসছি। কারণ, আমার ভাবনায় রয়েছে মীরসরাইয়ের সামগ্রিক কল্যাণ। সেখানকার মানুষেরা ভালো থাকলেই আমি খুশী। পারভেজ সাজ্জাদ (৫৩) বলেন, শেখ হাসিনার দু:শাসনের ভিকটিমরা ছিলেন আমার সহযোগিতার তালিকায়। বিশেষ করে স্বৈরাচারের আমলে মিরসরাইয়ের শতশত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অনেককে জেলে নেয়া হয়। ঐসব নেতা-কর্মীর মুক্তির জন্যে আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি তাদের অসহায় পরিবারের কান্ডারি হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছিলেন পারভেজ সাজ্জাদ। ‘তারাই আমার সাংগঠনিক কার্যক্রমের অন্যতম চালিকা শক্তি। তারাই এখোন আহবান জানাচ্ছেন পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হবার জন্যে।’ এ প্রসঙ্গে পারভেজ বলেন, আমি আশা করছি অতীত জীবনের সাংগঠনিক কর্মকান্ড, হাই কমান্ডের প্রতি অবিচল আস্থা এবং বিএনপির চরম দু:সময়ে থেমে না যাবার তথ্যই আমাকে দলীয় মনোনয়নের পথে এগিয়ে নেবে। এছাড়া, সৎ জীবন-যাপনের পাশাপাশি সাংগঠনিক নেটওয়ার্কেও সততার অনন্য উদাহরণ অব্যাহত রাখতে চাই।
বিএনপির উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন কমিটির সিনিয়র কো-কনভেনর এবং নিউইয়র্ক বিএনপির সাবেক সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, মীরসরাই এলাকাতে বিএনপির যদি কেউ চাঁদাবাজি-ধান্দাবাজিতে লিপ্ত থাকেন, তাদেরকেও সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী হাই কমান্ডের পরামর্শক্রমে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবো না। কারণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অন্যতম শর্তই ছিল দল এবং জাতিকে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসবাদ-দখলবাজ মুক্ত করার।
নিউইয়র্কে মির্জা ফখরুলের সাথে পারভেজ সাজ্জাদ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের পর বুয়েট থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে এমফিল করা তামান্না শবনম পাপড়ীর সাথে ২০০৮ সালে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন নিউইয়র্কের এই ব্যবসায়ী-রাজনীতিক পারভেজ। ইমিগ্র্যান্ট হয়ে নিউইয়র্কে আসার পর বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে বায়ো-ক্যামিস্ট্রিতে পিএইচডি করছেন পাপড়ী। বর্তমানে ৩ সন্তানের জনক পারভেজ সাজ্জাদের স্ত্রী ড. পাপড়ী নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বায়ো-মেডিকেল বিষয়েও গবেষণা করছেন। উল্লেখ্য, উত্তর আমেরিকাস্থ জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পাপড়ীও পারভেজ সাজ্জাদের রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য কামনা করেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, বর্তমান মীরসরাই এলাকায় মোগল আমলে একটি সামরিক ঘাঁটি ছিল। ঘাঁটিটি মেহমান সরাই নামে পরিচিত। সেখানে মীর সাহেব নামে এক মুসলিম সৈনিক মারা যায়। তাঁর নামে এই থানার নামকরণ মীরের সরাই বা মীরসরাই করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মীরসরাই উপজেলার মোট আয়তন ৪৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার (১,১৯,৩২৪ একর)। একে চট্টগ্রাম এর প্রবেশদ্বার বলা যায়। এর উত্তরে ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা, ছাগলনাইয়া উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে সীতাকুন্ডু উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্দ্বীপ উপজেলা, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা। ভৌগলিকগত কারণে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ায় মীরসরাই এর জনসাধারণের আঞ্চলিক ভাষা নোয়াখাইল্লা উপভাষার অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ঢাকাস্থ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স করা পারভেজ সাজ্জাদ সেভাবেই বেড়ে উঠেছেন এবং প্রবাসেও এলাকাবাসীর সাথে আঞ্চলিক ভাষাতেই মিশে থাকেন। পারভেজ সাজ্জাদ মূলত: মিরসরাইয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিরাজ করছেন বহুজাতিক সমাজে।
নিউইয়র্কে তারেক রহমানের জন্মদিনের কেক কাটেন পারভেজ সাজ্জাদ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
সর্বশেষ জাতিসংঘের চলতি সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে নিউইয়র্কে আসা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরের নানা কর্মকান্ডের ছায়াসঙ্গি ছিলেন পারভেজ সাজ্জাদ। পারভেজ সাজ্জাদ শীঘ্রই ফিরবেন মিরসরাইতে বিএনপির কর্মকান্ডে সার্বক্ষণিকভাবে জড়িয়ে থাকার জন্যে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখোন থেকে মিরসরাই হবে আমার স্থায়ী ঠিকানা। তবে যেহেতু স্ত্রী-সন্তানেরা নিউইয়র্কে রয়ে যাবেন এবং ব্যবসাও চলমান থাকবে, তাই মাঝেমধ্যে আসবো অতিথির মত। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জনগণের ভালবাসায় যদি সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হতে পারি তাহলে প্রবাসের অভিজ্ঞতায় মিরসরাই তথা গোটা বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিতে তারেক রহমানের ছায়া সঙ্গি হয়ে থাকবো।
Posted ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24