৮ মাসে বরখাস্ত ১৩৯ ইমিগ্রেশন জজ

এসাইলামের আবেদন মঞ্জুর করলেই বরখাস্তের নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

এসাইলামের আবেদন মঞ্জুর করলেই বরখাস্তের নোটিশ

দীর্ঘ শুনানীর পর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক’র আলোকে রায় লেখার মধ্যেই বরখাস্তের নোটিশ পেলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ইমিগ্রেশন জজ শিরা লেভাইন। প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। তবে চেম্বারের বাইরে তাকিয়ে দেখেন যে সহকর্মীরা তার সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছেন বিদায় জানানোর জন্যে। কোন ধরনের আগাম নোটিশ ছাড়াই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ মাসে বরখাস্ত করা হয় ১৩৯ জজকে। কেবলমাত্র সেপ্টেম্বরেই ২৪জনকে বরখাস্তের ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযানের উপরোক্ত সময়ে ২০ লাখের মত বিদেশীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের তথ্য জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। একইসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের ৭২টি ইমিগ্রেশন কোর্টের ৬ শতাধিক বিচারকের মধ্যে ১৩৯ জনকে কোন ধরনের নোটিশ ছাড়াই বরখাস্তের ঘটনায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা তথা এসাইলামের আবেদন ঝুলে থাকার সংখ্যা বেড়ে ৩৮ লাখ হয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের আওতায় ইমিগ্রেশন কোর্টের দেখভালের পুরো দায়িত্ব বিচার বিভাগের নয়, এটি নির্বাহী বিভাগের আওতায়। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আলোকে যেসব বিচারক এসাইলামের আবেদন মঞ্জুরির ক্ষেত্রে উদারতা দেখাচ্ছেন কিংবা পেশকৃত ডক্যুমেন্ট ও আবেদনকারির বক্তব্যের বিশ্লেষণের পর যথাযথ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তথা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিচ্ছেন, তারাই বরখাস্তের নোটিশ পেয়েছেন বলে ইমিগ্রেশন এটর্নীরা অভিযোগ করেছেন। এরফলে বিচারকরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। কেউই এসাইলামের আবেদনকে মঞ্জুর করার সাহস দেখাচ্ছেন না। যা দৃশ্যমান হচ্ছে শুনানীর তারিখ পিছিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে। সিএনএন এবং নিউইয়র্ক টাইমসের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক পদক্ষেপই ইমিগ্রেশন-ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংস করার সামিল। দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সাথে কাজ করা বিচারপতিগণকে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির নিষ্ঠুর ভিকটিম হতে হচ্ছে। জানা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোস্থ ইমিগ্রেশন কোর্টের জজ শিরা লেভাইন বরখাস্তের ই-মেল পেয়েছেন দিবসের তৃতীয় মামলাটির শুনানীকালে। সেটিও ছিল এসাইলামের আবেদন। এই মামলায় আবেদনকারির এটর্নীর মতামত শোনার সাথে সাথে কম্প্যুটারে নোট নিচ্ছিলেন-এমনি সময়ে ই-মেল এলো বরখাস্তের। শিরা লেভাইন গণমাধ্যমে বলেন, আমি এটা কী দেখছি? শুনানীতে বিরতি দিলাম। বিচারকের চেয়ার থেকে উঠে পেছনে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে ভাবলাম-এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এরপর এজলাসে বসে শিরা লেভাইন বাদি এবং বিবাদিপক্ষ তথা সরকারী এটর্নীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন যে, মামলাটির শুনানী এখানেই সমাপ্তি করতে হচ্ছে। বিচারপতি লেভাইন তার অনুবাদকের মাধ্যমে আবেদনকারি বিদেশীকে অবহিত করেন যে তারপক্ষে মামলাটির শুনানী সমাপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই তিনি ব্যক্তিগত জরুরী কাগজপত্র নিয়ে আদালত ত্যাগ করেছেন। এটি সেপ্টেম্বরের ২৪টি বরখাস্তের আদেশের একটি। একইপরিস্থিতি উপস্থাপন করেছেন বরখাস্তকৃত বিচারপতি অ্যাশলি টাবাড্ডোর। ট্রাম্পেরে প্রথম আমলের পুরো চার বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনসহ ১৫ বছরের পুরনো এই বিচারপতিকেও সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ইমিগ্র্যান্টদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্টরা নাজুক পরিস্থিতিতে নিপতিত হচ্ছেন-এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে। এই বিচারপতিও বরখাস্তের আদেশকে চ্যালেঞ্চ করেছেন শিরা লেভাইনের মত।

জানা গেছে, যেসব বিচারপতি এসাইলামের আবেদন মঞ্জুর করছেন তারাই বরখাস্তের শিকার হয়েছেন। সে সব শুন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাস্তবায়নে সহায়ক লোকজন দিয়ে। আর এভাবেই ইমিগ্রেশন কোর্টে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। যার খেসারত দিচ্ছেন নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়ার স্বপ্নে বিভোর বিদেশীরা।

বরখাস্তের ভিকটিম বিচারপতিগণের ব্যাপারে অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, যারা এসাইলামের আবেদন মঞ্জুর করছেন তারাই টার্গেট হচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, ফ্লোরিডা এবং ওয়াশিংটনের ইমিগ্রেশন কোর্টে সাম্প্রতিক সময়ে এসাইলাম মঞ্জুরির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এসব কোর্টের শতাধিক বিচারপতিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ‘এক্সিকিউটিভ অফিস ফর ইমিগ্রেশন রিভিউ’র অফিস থেকে এহেন বরখাস্তের নির্দেশ জারি হচ্ছে। এ ধরনের আদেশকে পুরোপুরি বেআইনী হিসেবে মন্তব্য করেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব প্রফেশনাল এ্যান্ড টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারস’র প্রেসিডেন্ট ম্যাট বিগস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইমিগ্রেশন কোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। যে সময়ে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক অবস্থায় উঠেছে, তেমনি সময়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতিগণকে বরখাস্তের ঘটনা পুরো বিচার ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একইসাথে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরা দিতে আসা অভিবাসীদেরকে আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) এজেন্ট কর্তৃক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটনাও আতংক তৈরী করেছে কম্যুনিটিতে। অনেকে নানা অজুহাতে শুনানীর তারিখ পিছিয়ে নিচ্ছেন, ফলে পেন্ডিং আবেদনের সংখ্যা শীঘ্রই ৪০ লাখে উঠবে বলে সিরাক্যুস ইউনিভার্সিটির ‘ট্র্যাঞ্জেকশনাল রেকর্ড এ্যাক্সেস ক্লিয়ারিং হাউজ’ আশংকা করেছে। শুধু পেন্ডিং থাকা আবেদনের সংখ্যা বাড়বে তা নয়, একইসাথে বরখাস্ত হওয়া বিচারপতির কোর্টের মামলাগুলোর ভাগ্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us