
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ
জেবিবিএ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সিটি মেয়র প্রার্থী যোহরান মামদানী। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী যোহরান মামদানী সকলকে সজাগ থাকার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, ৪ নভেম্বর আমরা নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। তাই কোন ধরনের অপপ্রচারনায় বিভ্রান্ত না হয়ে ব্যালট যুদ্ধে বিপুল বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। যেমনটি দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে আপনারা আমাকে দিয়েছেন। যোহরান উল্লেখ করেন, আমরা ১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছি নিউইয়র্কের সাবেক গভর্ণর এবং প্রয়াত গভর্ণরের পুত্র (ক্যুমো)কে। এরপরও তিনি থাকেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি আপনাদের প্রত্যাশাকে ধুলিসাৎ করতে চান। আপনাদের এগিয়ে চলাকে থামিয়ে দিতে চান। আমি এবং আপনারা যাতে অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম না হোন সে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
‘জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন’ জেবিবিএ) এবং ‘বাংলাদেশীজ ফর যোহরান’র যৌথ উদ্যোগে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় শানাই পার্টি হলে ব্যবসায়ী-কর্মজীবী প্রবাসীগণের এক সমাবেশে সিটি মেয়র নির্বাচন ঘিরে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেদিকে ইঙ্গিত করে যোহরান মামদানী বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে এই স্থানেই আপনাদের সাথে মিলিত হয়ে বিজয়ের যে জয়গানে মিলিত হয়েছিলাম, আজকের সমাবেশ থেকে এই সংকল্প উচ্চারিত হচ্ছে। এটাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে ছিনিয়ে আনতে সহায়তা করবে। কারণ আমরা সকলের বসবাসের উপযোগী একটি শহর গড়তে চাই।
নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলমান প্রার্থী যোহরান আরো উল্লেখ করেন, বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই সিটিকে কঠোর পরিশ্রমী-খেঁটে খাওয়া অভিবাসীসহ সকলের বসবাসের উপযোগী করার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আসছে ৪ নভেম্বরের নির্বাচনেও সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আজকের এই সমাবেশে সর্বস্তরের বাংলাদেশীর সমাগম থেকে আমি সেই স্বপ্নের পরিপূরক পথেই রয়েছি বলে মনে করছি। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মুসলমান ও দক্ষিণ এশিয়ান ভোটারকে দলে দলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। যোহরান বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি নিউইয়র্ক সিটিকে সত্যিকারের স্বপ্নের শহরে পরিণত করতে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে একজন মুসলমানকে নির্বাচিত করার মধ্যদিয়ে নয়া ইতিহাসের সাক্ষী হবার জন্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।
জেবিবিএ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সিটি মেয়র প্রার্থী যোহরান মামদানী। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
‘বাংলাদেশীজ ফর যোহরান’র সদস্য-সচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের সূচনা বক্তব্যের পর জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদের সভাপতিত্বে এ নির্বাচনী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালক ইমাম শামসী আলী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, জেবিবিএর সেক্রেটারি তারেক হাসান খান প্রমুখ। সকলেই মামদানীকে বিপুল বিজয় দিতে পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। এ সময় অতিথি হিসেবে মঞ্চে আরো উপবিষ্ঠ ছিলেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, অ্যাম্পায়ার কেয়ার এজেন্সির সিইও এবং আবাসন ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, আসন্ন এ নির্বাচনে যোহরানের (৩৩) মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যান্ড্রু ক্যুমো (৬৭)। ডেমক্র্যাটিক পার্টির বর্তমান মেয়র এরিক এডামস পুননির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহবানে। কারণ, সকল জরিপেই ক্যুমো এবং এডামসের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন য্হোরান। যোহরান হচ্ছেন ট্রাম্পের ভাষায় ‘সমাজতান্ত্রিক ডেমক্র্যাট’ অথবা চরমপন্থি ডেমক্র্যাট। তাই তাকে যে কোন উপায়ে পরাজিত করতে না পারলে নিউইয়র্ক সিটি সকল ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এছাড়া, বর্তমান মেয়র এরিক এডামসের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিসহ বেখ কটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেতেও প্রেসিডেন্টের ‘ক্ষমা’র বিকল্প নেই ভেবেই এডামস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া-কেও সরে দাঁড়ানোর আহবান উচ্চারিত হচ্ছে। অর্থাৎ যেভাবেই হউক যোহরানকে ঠেকানোর একটি প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। এমনি একটি পরিস্থিতির মধ্যে এই সিটির বাংলাদেশী তথা মুসলিম ভোটাররা জোট বেঁধেছেন যোহরানের পক্ষে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে দু’লাখের মত মুসলমান রয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ান হিসেবে ৩ লাখের বেশী। উগান্ডায় মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় আফ্রিকান আমেরিকানদের একটি অংশ ছাড়াও হিসপ্যানিক ও নতুন প্রজন্মের ভোটারের সমর্থনও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে যোহরানের প্রতি। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক গভর্ণর ক্যুমো ছুটছেন মসজিদ-মন্দিরে। নিজেকে অনেক বেশী অভিজ্ঞ হিসেবে দাবি করছেন ক্যুমো। বলছেন যে, নিউইয়র্কের মত একটি সিটিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। গত শুক্রবার জেবিবিএর অপর অংশের সেক্রেটারি ফাহাদ সোলায়মান জ্যাকসন হাইটসে একটি মসজিদে এনেছিলেন ক্যুমোকে। সে সময় কিছু মুসল্লী ক্যুমোকে ভোটদানের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। এভাবেই যোহরানের মুসলিম ভোট ব্যাংকের মত হিন্দু ভোটারের মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টির প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, যোহরানের বাবা মাহমুদ মামদানী ভারতের গুজরাটের মুসলমান এবং মা হলেন পাঞ্জাবের হিন্দু মিরা নায়ার। এই দম্পতি উগান্ডায় বসবাসের সময় যোহরানের জন্ম ( ১৮ অক্টোবর,১৯৯১) এবং তার বয়স যখোন ৫ বছর তখোন তার মা-বাবা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপটাউনে বসতি গড়লেও দু’বছর পরই ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।
ছবির ক্যাপশন-১ ও ২ যোহরান মামদানী-জেবিবিএ
Posted ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24