অনলাইন ডেস্ক
প্রিন্ট
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করছে বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের উচিত, নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানানো; সেই সঙ্গে অধিকার রক্ষা ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারকে উৎসাহ দেওয়া।
বুধবার এইচআরডব্লিউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে গত ১২ মে এক আদেশে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আদেশে দলটির সভা-সমাবেশ, প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নিরপরাধ কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও এইচআরডব্লিউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়।
সংস্থাটির এশীয় অঞ্চলের পরিচালক মীরাক্ষী গাঙ্গুলি বলছেন, “বাংলাদেশের জনগণকে শেখ হাসিনার আমলে যে ধরনের আচরণ সহ্য করতে হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সেই একই আচরণে জড়ানো উচিত নয়।
“বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়কে অন্তর্বর্তী সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে তাদের উচিত হবে, সেখানকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার নিরুৎসাহ দিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।”
এইচআরডব্লিউ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের কাউকে ধরা হয়েছে সন্দেহভাজন হত্যার অভিযোগে; কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন সসন্ত্রাসবিরোধী আইনে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন; চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগও আছে, যা শেখ হাসিনার সময়কার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
এইচআরডব্লিউ বলছে, ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত আলোচনাসভা থেকে গত ২৮ অগাস্ট সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আদালতে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী।
“গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও রয়েছেও।”
এইচআরডব্লিউ বলছে, “শুরুতে আটক ব্যক্তিদের পরিবার ও তাদের আইনজীবীদের বলা হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ঘটনায় পরে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
“পুলিশের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সরকারবিরোধী কার্যক্রমে উসকানি দিয়েছেন, যদিও এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।”
মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, “৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার জামিন শুনানিতে পান্নাকে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ পোশাক পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। সেদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান।”
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির এক স্বজন এইচআরডব্লিউকে বলেন, “এটা ছিল একটা আলোচনা অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি ছিল না। এটা সন্ত্রাস হলো কীভাবে?
“সেদিন যারা হামলার শিকার হলেন, তারা কারাগারে আছেন। আর যারা হামলা চালিয়েছেন, তারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই সরকারের চেহারা একেবারে আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই।”
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধ আইন হয় ২০০৯ সালে; আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সংশোধন আনার প্রয়োজন ছিল। এছাড়া রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সংশোধনের দাবি ছিল বলে ভাষ্য সরকারের।
Posted ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24