বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে স্বর্ণের দাম অবিশ্বাস্যরকমভাবে বেড়েছে। এই প্রথমবারের মত প্রতি আউন্সে বৃদ্ধি পেয়েছে চার হাজার ডলার। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ যাবত ৫০% বেড়েছে প্রতি আউন্সে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির পাশাপাশি ফ্রান্স ও জাপানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান থাকায় বিনিয়োগকারিরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির পারদ কমে যাওয়ায় নিউইয়র্কস্থ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদহার আরো কমিয়ে দেয়ার পূর্বাভাস দেয়ায় ডলারের দামও কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মুনাফা ধরে রাখতে অনেক দেশই স্বর্ণে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এ তালিকায় এগিয়ে রয়েছে চীন। ভারতও স্বর্ণের মজুদ বাড়াচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় মার্কিন গণমাধ্যমসমূহে বৃহস্প্তিবার স্বর্ণের দাম হুহু করে বৃদ্ধি পাবার সংবাদে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিরতার ভয়ংকর চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। ফেডারেল সরকারে শাটডাউন বৃহস্প্রতিবার নবম দিবস অতিবাহিত করেছে। কংগ্রেসে এখনো কোন সমঝোতার লক্ষণ নেই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশেও বিলম্ব ঘটছে। এতে বিনিয়োগকারিদের বিকল্প সূত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমার সময় ও সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য।
উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংক-ইউবিএস’র বিশেষজ্ঞ জিয়োভ্যান্নি স্টোনভো শুক্রবার নিউজউইক-কে বলেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধিও সাথে সঙ্গতি রেখেই স্বর্ণের দাম বেড়ে চলছে। নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডলারের চেয়ে স্বর্ণকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মার্কিন ডলারের নিম্নগতির সাথে বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্পর্ক বহু পুরনো। সত্তরের দশকে মুদ্রাস্ফীতির নাজুক পরিস্থিতিতেও স্বর্ণের মূল্য এভাবে বৃদ্ধি পায়নি। এবার অবিশ্বাস্যরকম পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির ওপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণরত নিউইয়র্কের অর্থনীতিবিদ ইওয়া মেন্টলি বলেন, দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা সর্বোপরি রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিতদের ওপর জনগণের আস্থাহীনতাকেও দায়ী করা যায় স্বর্ণের মূল্য অবিশ্বাস্য রকমভাবে বৃদ্ধির ঘটনাকে। নিউজার্সিস্থ বিশ্বখ্যাত রাটগার্স ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক এবং স্ট্যানফোর্ড হুভার ইন্সটিটিউশনের ভিজিটিং ফেলো মাইকেল বরডো বলেছেন, স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির এই লাগাম কেউ টেনে ধরতে পারবেন বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না। ১৯৭১ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্বর্ণের মূল্য বেধে দিয়ে দিয়েছিলেন প্রতি আউন্ডে ৩৫ ডলার করে। এতদসত্বেও স্বর্ণের বাজার মুক্ত ছিল। স্বর্ণের চাহিদার সাথে উৎপাদনের গতি-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারটিও হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির জন্যে দায়ী হতে পারে। অধ্যাপক মাইকেল বরডো বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধ, ট্রাম্পের শুল্কধার্য করার ব্যাপারটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির জন্যে দায়ী। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনায় শ্রমবাজারের ঘাটতি ও প্রবৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। একইসময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারটিও মার্কিন দেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। ডলারের ওপর ফেডারেলের কর্র্তৃত্ব ধরে রাখাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক বরডো।
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশী নারীরা স্বর্ণের প্রতি অধিক আকৃষ্ট। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের স্বর্ণের দোকানগুলোতে গ্রাহকের আগমন ৭৫% কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেছেন। যারা দোকানে আসছেন তারা উচ্চ মূল্যে স্বর্ণের গহনা ক্রয়ে মনোযোগী হচ্ছেন না। অধিকন্তু ইমিটেশনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ব্যবসায়ীরা আরো জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে স্বর্ণ কেনা-বেচা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মত কমেছে। গতবছর বেড়েছিল প্রতি আউন্ডে ২৫%, আর এবার কোথাও কোথাও তা ৫৪% বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে স্বর্ণালংকার।
Posted ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24