নিউইয়র্কে ‘বিরক্ত সিলেটবাসী’র র‌্যালি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনের হুমকি

এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ

নিউইয়র্কে ‘বিরক্ত সিলেটবাসী’র র‌্যালি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনের হুমকি

সিলেটের উন্নয়নে বৈষম্য চলতে থাকলে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।

নিউইয়র্কে সিলেটবাসীর র‌্যালি থেকে সিলেটের সামগ্রিক উন্নয়নে বৈষম্য এবং উদাসীনতার অবসান না ঘটলে বাংলাদেশের সাথে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হলো।

‘বিরক্ত সিলেটবাসী’ এবং ‘ জালালাবাদ এসোসিয়েশন’র ব্যনারে ১৫ অক্টোবর বুধবার অপরাহ্নে জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত এ র‌্যালির উদ্যোক্তাগণের অন্যতম সিলেটের সন্তান প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকাস্থ সাবেক প্রতিনিধি এবং ‘প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা’র সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন বলেন, ‘এটা একটা প্রতিকী সমাবেশ। আমরা সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক ঠেলাঠেলি দেখতে চাই না। সবাই সজাগ হবেন, এটা কোন ব্যক্তিবিশেষের আন্দোলন নয়, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আজ সিলেটবাসী রাস্তায় নেমেছে। সিলেটের রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ, সিলেটের বিমান, সিলেটের শিক্ষা, সর্বক্ষেত্রে সিলেটকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে সিলেটবাসী মনে করে। আমরা বিশ্বাস করি মানুষ এখোন বিরক্তি প্রকাশ করতেছে, এই বিরক্তি এক সময় বিক্ষোভের জন্ম দেবে। এবং বিক্ষোভ থেকে আমরা জানি, এক সময় বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন শুরু হবে।’

শাহ মুজিবুর রহমান জকনের পরিচালনায় এই র‌্যালিতে বক্তব্যকালে যুক্তরাষ্ট্রস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সকলের কাছে একটাই আব্দার জানাই, একটাই কথা আমাদের, পরিস্কার-আমরা সিলেটের দাবি-দাওয়া নিয়ে বর্তমান গভর্ণমেন্টের কাছে আমরা দাবি জানাই যে, সিলেটের উন্নয়নে বৈষম্য চলছে। যেহেতু বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আপনার এই গভর্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে কারণে আবারো সিলেটের মানুষ এই নিউইয়র্কে দাঁড়িয়ে ইন্টারিম গভর্ণমেন্টের কাছে এই আহবান রাখছে সিলেটের উন্নয়নে যেন বর্তমান গভর্ণমেন্ট অন্য ডিস্ট্রিক্টের তুলনায় বৈষম্য না করে। আমরা সিলেটিরা যেন বৈষম্যের শিকার না হই।

র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতার পরই সিলেট পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল। ‘জাগো সিলেট’ শীর্ষক এক আন্দোলন রচনা করেছিলেন সিলেটের সামগ্রিক উন্নয়নের দাবি আদায়ের অভিপ্রায়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মুক্তিযোদ্ধা বাবুলকে দেখিয়ে এবং সিলেটের উন্নয়নে দীর্ঘ আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বদরুল খান আরো বলেন, ‘আজ আবারো সিলেটের উন্নয়নের দাবিতে তিনি সোচ্চার এবং উচ্চারণ করছেন যে, আমরা সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। এহেন অবস্থা থেকে যাতে আমরা উদ্ধার হতে পারি, সেই উদ্ধার হইতে হলে জালালাবাদবাসী তথা সিলেটবাসী আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই গভর্ণমেন্টের কাছে আহবান জানাতে হবে সিলেটের দাবি-দাওয়া যেন অনতিবিলম্বে পূরণ করা হয়।’
‘সিলেট আমার পবিত্র মাটি-এ মাটির সাথে বেঈমানী চলবে না’, ‘সিলেট নিয়ে বৈষম্য কেন’ ইত্যাদি প্লেকার্ড হাতে ক্ষুব্ধ সিলেটিদের এই র‌্যালিতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন শেকিল চৌধুরী, ফকু চৌধুরী, আব্দুস শহীদ, মিসবাহ আহমেদ, শেখ আতিক, শেলি জামান খান, শাহানা বেগম, ভায়লা সেলিনা, নূরে আলম জিকু, যোসেফ চৌধুরী, শেখ মো. ফজলুল হক, শাহাদৎ মজুমদার, বেদারুল ইসলাম বাবলা, খালিকুর রহমান, গরহর কিম চৌধুরী, মো. জাবেদউদ্দিন, মাহবুবুর রহমান, মোজাহেদুল ইসলাম, হুমায়ূন কবীর সোহেল, লোকমান হোসেন, শামীম আহমেদ, রোকন হাকিম,আজিমুর রহমান বোরহান, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী ও এম চৌধুরী রানা প্রমুখ।

বৈষম্যহীনভাবে সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে ব্ক্তব্য দেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান। সামনে চেয়ারে বসা বাবরুল ইসলাম বাবুল । ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।

বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর সিলেটের চিত্রে আশার আলো এখনো ¤øান। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ-এই চার জেলার মানুষ এখনো মনে করেন, উন্নয়ন যেন তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী সিলেটবাসীরাই। তাদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, অথচ নিজ অঞ্চলই পড়ে আছে প্রশাসনিক অবহেলার ছায়ায়।

বক্তারা আরো বলেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে পঞ্চাশ বছর আগে। কিন্তু সিলেট এখনো যেন প্রশাসনিক অবহেলা ও রাজনৈতিক প্রান্তিকতার বলয় থেকে মুক্ত হতে পারেনি।” বক্তাদের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ, কিন্তু সেই ক্ষোভের ভেতরেই ছিল এক গভীর মমতা নিজ ভূমির প্রতি, নিজ পরিচয়ের প্রতি।

বক্তারা সমস্বরে বলেন, “যদি এই বঞ্চনা চলতেই থাকে, তাহলে বিরক্তি বিক্ষোভে পরিণত হবে, আর বিক্ষোভ হয়তো একদিন বিচ্ছিন্নতার পথে গড়াবে।” তাদের ভাষায়, এই আহŸান কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নয়; এটি ন্যায্য অধিকার ও বৈষম্যহীন উন্নয়নের দাবি।

বক্তারা আরো অভিযোগ করেন যে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে, কারণ একটি অঞ্চলের নামেই যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, সেখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কেন সীমিত থাকবে। একই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে দ্রæত ৬ লেনে উন্নীত করা, রেলপথ সংস্কার ও নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা, এমনকি সিলেট-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়টিও তাঁরা উত্থাপন করেন।

চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে উন্নয়নের দাবিও ছিল জোরালো। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়ন, অফিস-আদালতে ঘুষ বন্ধ করা, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থানীয় উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া-এসব দাবি বক্তৃতায় ঘন ঘন উঠে আসে। বক্তারা বলেন, সিলেটের নদী-খাল রক্ষা করতে হবে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে এবং পর্যটন এলাকাগুলো সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে হবে।

বৈষম্যহীনভাবে সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে অনুষ্ঠিত র‌্যালিতে প্রবাসীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।

র‌্যালি শেষে “বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করে। এতে তারা তুলে ধরেছেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চনা, বৈষম্য, এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সিলেট অঞ্চল অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, হাসপাতালের সেবা করুণ, রেললাইন জরাজীর্ণ, বিমানবন্দর সীমিত ক্ষমতার। উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও তহবিলের অর্থ ছাড় হয় না, অগ্রগতি থাকে শুধু কাগজে-কলমে। সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করে তার অধীনে উন্নয়ন প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে। প্রবাসীদের স্থাবর সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত নিশ্চয়তা দিতে হবে, প্রতিটি জেলায় প্রবাসী বিষয়ক মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে এবং বিমানবন্দর ও সরকারি অফিসে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us