নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ
স্বামী ইশতিয়াক খান এবং কন্যা রিয়া খানের সাথে মাসুমা খান (সর্বডানে)। ছবি-পারিবারিক এ্যালবাম।
পূর্ব নির্দ্ধারিত তারিখে লসএঞ্জেলেস ইমিগ্রেশন দফতরে হাজিরা দিতে গিয়ে গত ৬ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশী মাসুমা খান (৬৪)। ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)এজেন্টরা তাকে গ্রেফতার করে শতমাইল দূর একটি ডিটেনশন সেন্টারে রেখেছে। মাসুমা খানের স্বামী নরসিংদীর সন্তান ইশতিয়াক খান ১৯ অক্টোবর রোববার রাতে এ সংবাদদাতাকে জানান, ২০১৪ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের পরই তার জন্যে গ্রীণকার্ডের আবেদন করেছি। এরপর ইউএসসিআইএস (ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস) তার আবেদন নাকচ করেছিল। কারণ হিসেবে জানায় যে, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফররত কন্যা রিয়া খান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মা মাসুমা খান ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এরপর মেয়ের পাশে থাকার সময়েই ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের চেষ্টাকালে লসএঞ্জেলেস সিটির জনৈক বাংলাদেশী সবকিছু করে দেয়ার অঙ্গিকার করেন এবং মাসুমা খানের কাছে মোটা অংকের ডলারও নিয়েছেন। এভাবেই সময় অতিবাহিত হয়েছে দেড় দশকের মত। আর কোন খোঁজ-খবর পাননি ঐ বাংলাদেশীর কিংবা ইমিগ্রেশন দফতরের কোন নোটিশও পাননি। অর্থাৎ ঐ প্রবাসী তার সাথে প্রতারণা করেছেন বলে ইশতিয়াক খানের ধারণা। তবে একটি আবেদন হয়তো করেছিলেন ভিন্ন ঠিকানায় ভিন্ন নামে, যেকারণে আবেদনটি নাকচ হবার নোটিশ পাননি। এরফলে জারি হয় বহিষ্কারের আদেশ এবং এ তথ্য জানতে পারেন স্বামী ্ইশতিয়াক খান সিটিজেন হবার পর। তিনি জানালেন, এরপর আমরা এটর্নী নিয়োগ করেছি ঐ বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়ার জন্যে। কিন্তু সেই আবেদন দু’দফা নাকচের পর ২০২০ সালে আবারো আপিল করেছি-যা পেন্ডিং রয়েছে। এ অবস্থায় ২০২০ সালে আইস তাকে (মাসুমা খান) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং আবেদনটি পেন্ডিং থাকাবস্থায় বছরে একবার ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ৬ অক্টোবর মাসুমা খান হাজিরা দেয়ার সময় সাথে ছিলেন না তার এটর্নী। এমনি অবস্থায় মাসুমা খানকে আটক করেছে আইস। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরা দিতে যাওয়া লোকজনকেও ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারই ভিকটিম হয়েছেন মাসুমা খান।
এ বছরের ৬ জানুয়ারিতে শুরু লসএঞ্জেলেস সিটির এলটাডিনায় লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয় এই ইশতিয়াক খানের বাড়িও। সে সময় থেকেই তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ গৃহহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করেছেন। এমনি নাজুক অবস্থার মধ্যেই মাসুমা খানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের অভিপ্রায়ে গ্রেফতার এবং ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সংবাদ জেনে তার একমাত্র সন্তান ফ্লোরিডার টেম্পা-বে’তে একটি ল’ ফার্মে কর্মরত এটর্নী রিয়া খান ছুটে যান ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারে। কোন ধরনের অপকর্মে কখনোই জড়িত না হওয়া সত্বেও কেন তার অসুস্থ (উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস-সহ নানা জটিল রোগ)মাকে আটক করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্থানীয় কংগ্রেসওম্যান জুডি চ্যু’র শরনাপন্ন হয়েছেন। ডেমক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান জুডি চ্যু এ নিয়ে কথা বলেছেন ইউএস সিনেটর এডাম শিফের সাথে। তারা উভয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিটিজেনের স্ত্রী এবং প্রচলিত আইনে অভিবাসনের স্ট্যাটাস এডজাস্টের আবেদন পেন্ডিং থাকা সত্বেও কেন মাসুমা খানকে আটক করার সংবাদে। কিন্তু ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা চলমান শাট-ডাউন’র (বাজেট পাশ না হওয়ায়) অজুহাত দেখিয়ে কিছু করা থেকে বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে, এটর্নী স্টিভেন রিডগিলের মাধ্যমে স্ত্রীকে প্যারলে মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন ইশতিয়াক খান। সেই আবেদনের শুনানী কখন হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এবিসি টেলিভিশন-সহ বেশ কটি মার্কিন গণমাধ্যমেও মাসুমা খানের এই গ্রেফতারের তথ্য প্রচারিত হয়েছে। লসএঞ্জেলেস কম্যুনিটির লিডার মমিনুল হক বাচ্চু গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে মাসুমা খানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি নিজ নিজ এলাকার কংগ্রেসম্যান/সিনেটরের সাথে এ নিয়ে দেন-দরবারের আহবান জানিয়েছেন সকল প্রবাসীর প্রতি।
এদিকে, মাসুমা খানের গ্রেফতারের সংবাদে সমগ্র কম্যুনিটিতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে বহু অভিবাসীকে ইমিগ্রেশন কোর্টের ভেতর অথবা বারান্দা থেকে গ্রেফতার করার পর নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েক ডজন বাংলাদেশীকেও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এটর্র্নীরা জানান।
Posted ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24