বাংলাদেশীসহ ৪৫ হাজার ইমিগ্র্যান্টকে বহিষ্কারের নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশীসহ ৪৫ হাজার ইমিগ্র্যান্টকে বহিষ্কারের নোটিশ

এটর্নী মঈন চৌধুরী।

মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় তথা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে ‘গ্রীণকার্ড’ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে এখোন সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) এজেন্টরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ‘অভ্যন্তরীন দুর্বৃত্তদের কবল থেকে আমেরিকানদের রক্ষা’ (চৎড়ঃবপঃরহম ঃযব অসবৎরপধহ চবড়ঢ়ষব অমধরহংঃ ওহাধংরড়হ )শীর্ষক একটি নির্বাহী আদেশ জারির পর ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫ হাজার গ্রীণকার্ডের কার্যকারিতা স্থগিতের পর সংশ্লিষ্টদেরকে নিকটস্থ ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরার নোটিশ (এনটিএ) পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত: দুই হাজার বাংলাদেশীও আছেন বলে কর্তৃপক্ষীয় সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা অথবা অন্য কোন কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে যে তথ্য-উপাত্ত সাবমিট করেছেন সেগুলোর সত্যতা নিয়ে ইউএসসিআইএস (ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস)’র সন্দেহের উদ্রেক ঘটার পরই এনটিএ ইস্যু করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইউএসসিআইএস’র মুখপাত্র মাথিউ ট্র্যাগেসার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়ে মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত সাবমিট করেছেন এবং সে সব অসৎ মানুষেরা অভিবাসন ব্যবস্থার প্রকৃত ধারাকে অপদমিত করতে চেয়েছে, শুধু তাই নয় যারা দুর্বৃত্তপনায় লিপ্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে নিপতিত করেছে, তাদের চিহ্নিত ও বহিস্কারের জন্যে প্রেসিডেন্ট টাম্পের উপরোক্ত আদেশটি মন্ত্রের মত কাজ করছে। এজন্যে এসাইলাম কিংবা অন্য কোন প্রোগ্রামে গ্রীণকার্ডপ্রাপ্তদের ব্যাক গ্রাউন্ড নতুন করে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে সিটিজেনশিপের আবেদনের পরই। অর্থাৎ বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী গ্রীণকার্ডপ্রাপ্তির ৫ বছর পর সিটিজেনশিপের আবেদন করা যায়। সেই আবেদনের সময়েও অনেক কিছু উল্লেখ করতে হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক্সিডেন্ট কেস, মেডিক্যাল মেল প্র্যাকটিস ও ইমিগ্রেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশী-আমেরিকান আইনজীবী এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের পরিচালক এটর্নী মঈন চৌধুরী ২৭ অক্টোবর এ সংবাদদাতাকে জানান, সিটিজেনশিপের আবেদনের পর ইউএসসিআইএস সকল তথ্য উপাত্ত খতিয়ে দেখছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নির্যাতিত কিংবা নিগৃহিত হয়েছে বলে মিথ্যা ডক্যুমেন্ট সাবমিট করা হয়েছিল এবং সে সবের মাধ্যমেই তারা গ্রীণকার্ড পেয়েছে, সে সব গ্রীণকার্ড এখোন রিকল করা হচ্ছে। অর্থাৎ সে সব গ্রীণকার্ডের কার্যকারিতা স্থগিতের পর ‘নোটিশ টু এ্যাপিয়ার’ (এনটিএ) ইস্যু করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন আদালতে যাবার জন্যে। অর্থাৎ তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সে সময় হাতে গ্রীণকার্ড থাকলেও সেটি আর এ্যাক্টিভ থাকে না। এনটিএ প্রাপ্তরা যদি ঐ গ্রীণকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে চান কিংবা এনটিএ হাতে পাবার আগেই অন্য কোন দেশ ভ্রমণে থাকেন, তাহলে ফেরার সময় এয়ারপোর্টে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। আমার কিছু মক্কেল রয়েছেন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে। আরো যারা এনটিএ পেয়েছেন তাদের উচিত হবে অবিলম্বে অভিজ্ঞ একজন এটর্নীর শরনাপন্ন হওয়া। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটর্নী মঈন অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, ইতিমধ্যেই যারা সিটিজেনশিপ পেয়েছেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, টেক্সাস, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ওহাইয়ো, আলাবামা, ম্যাসেচুসেটস, কানেকটিকাট প্রভৃতি স্টেট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৮৪০ জনকে এনটিএ ইস্যু করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলেও এমন পদক্ষেপ অবলম্বন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সে তুলনায় ২৮১১% বৃদ্ধি পেয়েছেন এনটিএ ইস্যু এবং ভ’য়া ও মিথ্যা তথ্যে গ্রীণকার্ড প্রাপ্তদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া-এ তথ্য জানায় ইউএসসিআইএস। এনটিএ প্রাপ্তদের ৯০% হচ্ছেন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী। অর্থাৎ তারা কখনোই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভিকটিম ছিলেন না নিজের দেশে কিংবা কখনোই যে দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না তারা সেই দলের কর্মী/সংগঠকের ডক্যুমেন্ট বানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এলডিপি, বিএনপি, যুবদল এবং ছাত্রদলের কর্মী/সংগঠকের পরিচয় প্রদানকারীদের অনেকেই এনটিএ পাচ্ছেন বলে কম্যুনিটি সূত্রে জানা যাচ্ছে। আরো জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর যারা কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা যুবলীগ অথবা ছাত্রলীগের কর্মী/সংগঠন ছিলেন না তারা সে ধরনের মিথ্যা ডক্যুমেন্ট সাবমিট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে। এসব আবেদন অবশ্য এখনো পেন্ডিং রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, অনেকে থানা অথবা আদালতের জাল কাগজ তৈরী করেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের অথবা গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ মুসলমান হওয়া সত্বেও হিন্দু হিসেবে এসাইলাম প্রার্থনা করেছেন। এমন মিথ্যা তথ্য সাবমিটকারিদেরকে পূর্ণ শুনানীর আগেই তা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন ইমিগ্রেশন এটর্নীরা। কারণ, সকল আবেদনের শুনানীর আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাথে দূতাবাস/কন্স্যুলেটের কর্মীরা যোগাযোগ করে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে ডিজিটাল সিস্টেমের সহায়তাও নেয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশী এনটিএ পেয়েছে মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলাসহ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহের লোকজন। কারণ তারাই বাইডেনের আমলে দলে দলে মিছিল করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পরই এসাইলামের আবেদন করেছেন এবং ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন। এখোন তারা সিটিজেনশিপে আবেদন করছেন।

ছবির ক্যাপশন-এটনী মঈন চৌধুরী

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us