ওয়ার্ক পারমিট অটোম্যাটিক নবায়নের বিধির বিলুপ্তি

ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী আরেকটি পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী আরেকটি পদক্ষেপ

ওয়ার্ক অথরাইজেশন ডক্যুমেন্ট’ কার্ডের প্রতিকী ছবি।

গ্রীণকার্ডের জন্যে অপেক্ষারত অভিবাসী ছাড়াও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারি এবং রিফ্যুজি হিসেবে বসবাসের আবেদন পেন্ডিং থাকাবস্থায় ‘ওয়ার্ক অথরাইজেশন ডক্যুমেন্ট’ তথা ইএডি কার্ড পেতো ইউএসসিআইএস (ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস) থেকে। এটি প্রথমবার পাবার পর তা পুনরায় নবায়ন করা হতো আবেদনের পরই এবং তার জন্যে ৫৪০ দিন সময় হাতে থাকতো অর্থাৎ ৫৪০ দিন পর্যন্ত ইএডি কার্ড নবায়নের সময় আপনা-আপনি বৃদ্ধি পেত। ৩০ অক্টোবর অর্থাৎ বৃহস্প্রতিবার থেকে সেই সময়সীমা বাতিল করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিভাবক মন্ত্রণালয় ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ তথা ডিএইচএস এ সম্পর্কিত একটি ঘোষণা জারি করেছে ফেডারেল রেজিস্টারে। এই ঘোষণার মধ্যে যারা যথাসময়ে নবায়নের আবেদন করেছেন তারাও আর আপনা-আপনি নবায়নের ঐ সুযোগ পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ অভিবাসন-বিরোধী মনোভাবে সোচ্চার ট্রাম্প প্রশাসন আরেকটি পদক্ষেপ নিল বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে আগ্রহীদের বিরুদ্ধে। ইএডি কার্ড না থাকলে তারা কোথাও কাজ করতে পারবেন না। কাজ করলে সেটি হবে বেআইনী এবং আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) এজেন্ট কর্তৃক গ্রেফতার হলে তারা বহিস্কারের প্রক্রিয়ায় পড়বেন।
ডিএইচএস এ ব্যাপারে বলেছে যে তারা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউএসসিআইএস’র পরিচালক যোসেফ অ্যাডলো বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকারের পরিবর্তে অভিবাসীগণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখোন আর তেমন ব্যবস্থা চলতে দেয়া হবে না। যারা কর্মকালিন কোন ধরনের অপকর্মে কিংবা কম্যুনিটির জন্যে হুমকিমূলক কোন তৎপরতায় লিপ্ত হয়নি-এমন ব্যাপারটি নিশ্চিত হবার পরই তাদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা হবে। এটা সকলের স্মরণে রাখা জরুরী যে, অভিবাসনের পূর্ণ মর্যাদা পাবার আগে ওয়ার্ক পারমিট লাভের ব্যাপারটি তাদের অধিকার নয়, এটি হচ্ছে সহৃদয়তা।

নয়া এই রীতি কার্যকর হবার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হবার ১৮০ দিন আগেই নবায়নের জন্যে আবেদন করতে হবে। আর এ সময়ের মধ্যেই তাদের আচরণ, নিজ দেশে কর্মকান্ডের যে বিবরণ দিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন তা যথাযথভাবে যাচাই করা হবে।

আর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন ইমিগ্রেশনে বিশেষ খ্যাতি অর্জকারী এটর্নী অশোক কর্মকার এবং ২০ অক্টোবর তিনি এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, গ্রীণকার্ডের আবেদনের সিদ্ধান্ত পেন্ডিং থাকাবস্থায় ইএইডি কার্ড নবায়নের প্রক্রিয়ায় এই নয়া জটিলতা সৃষ্টির আগে উচিত ছিল ইমিগ্রেশনের কাজের ধীরগতি কাটিয়ে উঠার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার। তাহলে এ নিয়ে কারোরই প্রশ্নের সুযোগ থাকতো না। তবে এহেন পরিস্থিতি সত্বেও যারা ৩০ অক্টোবর অথবা তারপর নবায়নের আবেদন সাবমিট করবেন, তেমন এসাইলাম প্রার্থী অথবা রিফ্যুজি হিসেবে আবেদনকারিরা কাজ অব্যাহত রাখতে পারবেন-কোন সমস্যা হবার কথা নয়। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে (২০২২ সালে) ইএডি কার্ড আপনা-আপনি নবায়নের এই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর সেজন্যেই ট্রাম্প প্রশাসন তার বিলুপ্তি ঘটালো আরো কিছু ইস্যুর মতো। আর এরফলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী অথবা রিফ্যুজি কিংবা সিটিজেনদের নিকটাত্মীয়রাই শুধু হতাশায় নিপতিত হলেন না, ইএডি কার্ডের মাধ্যমে যারা কৃষি খামার থেকে শিল্প-কারখানায় কঠোর শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ ঘটাতেন, তারাও বড় ধরনের সমস্যায় নিপতিত হবেন বলে মনে করছেন অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা। ইমিগ্রেশন কোর্ট কিংবা এসাইলাম অফিসার কর্তৃক মঞ্জুর হবার পর গ্রীণকার্ডের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীরাও স্বস্তিতে বসবাসে সক্ষম হবেন না। গ্রীণকার্ডধারীর স্বামী/স্ত্রী, বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর হওয়া ব্যক্তি, টিপিএস ধারী, সিটিজেন স্বামী/স্ত্রী/সন্তানের সাথে স্ট্যাটাস এডজাস্টমেন্টের আবেদনকারি, ই, এইচ অথবা এল ভিসাধারীর স্বামী/স্ত্রীরা নয়া এই বিধির ভিকটিম হলেন বলে ইমিগ্রেশন এটর্নীরা উল্লেখ করেছেন।

ইউএসসিআইএস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ২ লাখ ৯৩ হাজার থেকে সাড়ে চার লাখের মত ইএডি কার্ড নবায়নের/এক্সটেনশনের আবেদন পাওয়া যাচ্ছিল এবং এসব কার্ড আপনা-আপনি কার্যকর থাকতো। ইউএসসিআইএস প্রতি মাসে ইএডি কার্ডের আবেদন পেয়েছে ৫২৮০০টি এবং প্রসেস করেছে ৪৯ হাজারটি। এমনি অবস্থায় কোন ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ করে ইএডি কার্ড নবায়ন/এক্সটেনশনের নয়া বিধি কার্যকর করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-ব্যবস্থায় চরম অনীহারই প্রকাশ ঘটলো বলে মন্তব্য করেছেন ‘আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন’র পরিচালক এবং ইমিগ্রেশনে অভিজ্ঞ এটর্নী মঈন চৌধুরী।

এদিকে, ইউএসসিআইএস’র নিউইয়র্ক অফিস এ সংবাদদাতাকে ই-মেলে জানিয়েছেন যে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনায় নগদ অর্থের বিনিময়ে শতাধিক ব্যক্তির জাল কাগজপত্র তৈরীর অপরাধে তেঞ্জিন নরবো (৫৬) নামক এক তিব্বতিয়ানের ২৭ মাসের কারাদন্ড এবং এক লাখ ৭০ হাজার ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি কিম্বা এম উড এই রায় প্রদান করেছেন। তেঞ্জিন নরবো নিউইয়র্কের একটি ল’ ফার্মে কর্মরত অবস্থায় ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিব্বতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লোকজনের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে ‘একইধরনের পরিস্থিতির ভিকটিম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমনকি প্রকৃত পরিস্থিতি বর্ণনার পরও তেঞ্জিন ক্লায়েন্টের অজ্ঞাতে এহেন অপকর্ম করায় শতাধিক আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। এমন অভিযোগের তদন্ত শুরুর পরই তেঞ্জিন গ্রেফতার এড়াতে কানাডায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ ৫ বছর অনুসন্ধানের মধ্যদিয়ে গ্রেফতারের পর ২০২৪ সালের মার্চে তাকে কানাডা থেকে নিউইয়র্কের এইন ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছিল। এ বছরের মার্চে তেঞ্জিন দোষ স্বীকার করেন এবং ১৫ অক্টোবর তাকে উপরোক্ত দন্ড প্রদান করা হয়েছে। মামলার বিবরণে আরো জানা গেছে যে, তেঞ্জিন মাথাপিছু ৫ হাজার ডলার করে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন তৈরীর জন্যে। এমন গুরুতর অপরাধে লিপ্তদের সন্ধান দিতে এই (USCIS Tip Form) ওয়েবসাইট ভ্রমণের আহবান জানিয়েছে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, একইধরনের অপরাধে নিউইয়র্কের কয়েক বাংলাদেশী এবং ভার্জিনিয়ার একজন এটর্নীরও জেল-জরিমানা হয়েছে কয়েক বছর আগে।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us