নিউইয়র্কে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে ড. আলী রীয়াজের পদত্যাগ দাবি

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাধা কোথায়?

আনিসুর রহমান   প্রিন্ট
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাধা কোথায়?

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন গিয়াস আহমেদ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।

নিউইয়র্কে ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিএনপির সংবাদ সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সমীপে দাবি জানানো হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা অবিলম্বে প্রকাশের জন্যে। শীঘ্রই তারেক রহমান পবিত্র ওমরাহ পালনের পরই বাংলাদেশে যাবেন বলেও সংবাদ সম্মেলন থেকে জানান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ। এ সময় লিখিত বক্তব্যে গিয়াস আরো অভিযোগ করেছেন যে, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকার জনাব তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন সেই উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করছে। আপনারা জানেন, অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে হত্যার জন্য একাধিকবার চক্রান্ত করেছে। তবুও বর্তমান সরকার এখোন পর্যন্ত তার দেশে ফেরার নিরাপত্তার বিষয়ে কোন সরকারী ঘোষণা বা নিশ্চয়তা দেয়নি। বরং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারী এজেন্সি তাকে নিরুৎসাহিত করছে।’ লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘১/১১ এর অবৈধ সরকার অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছিল। দুর্নীতির কোন প্রমাণ না পেয়ে জোর করে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং রাজনীতি না করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছিল। বর্তমান আদালত ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে-হাসিনা সরকারের দেয়া মামলাগুলো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেন, বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত নেতা এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র হিসেবে তারেক রহমান বীরের বেশে ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে অবশ্যই তার নিরাপত্তার জন্যে গৃহিত বিস্তারিত পরিকল্পনার তথ্য জাতিকে অবহিত করতে হবে।

নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলের এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ। মঞ্চে আরো উপবেশন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের বিরাজিত প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার লাগামহীন দুর্নীতির তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘যে লক্ষ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, আজ সেই গণতান্ত্রিক স্বপ্নকে ভ’লুন্ঠিত করার জন্য জামায়াতের সহযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকার চক্রান্ত করছে। প্রায় একবছর ধরে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা কওে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এই সরকার জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য, এবং বিনা ভোটে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংবিধান পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণভোটের মাধ্যমে পরিবর্তনের চক্রান্ত করছে, যেখানে বিসমিল্লাহ রাহমানির রহিম’ বাদ দেয়া হয়েছে।’ গিয়াস আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এই সরকারের দুর্নীতি, তদবির বাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ব্যর্থতা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, বিদেশী বিনিয়োগের অভাব, গার্মেন্ট শিল্পের সংকট দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের পতিত দোসরেরা এখোন প্রশাসনে বসে দিল্লীর ইশারায় কাজ করছে। সরকারের উপদেষ্টাদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা।’

ঐক্যমত কমিশনের সদস্য ড. আলী রিয়াজের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, ‘অতীতে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ সমর্থন করেছেন। আমি নিজেও একাধিক প্যানেলে অংশগ্রহণ করেছি, যেখানে তার অবস্থান স্পষ্টভাবে পক্ষপাতদৃষ্ট ছিল। তিনি আজ ঐক্যমতের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করছেন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’

বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নানা ক’ট-কৌশলে জড়িত থাকার অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ঐকমত্য কমিশন জামায়াতের নির্দেশে সংবিধান পরিবর্তনের তাড়াহুড়ো করছে-যা আসলে নির্বাচনকে ব্যহত করার ষড়যন্ত্র। যা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের সামিল। তারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চায় না। কারণ জামায়াতের অতীত ইতিহাসই তা প্রমাণ করে। এই জামায়াত বরারবই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেছে-১৯৪৭ সালে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দাড়িয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়েছিল, ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আওয়ামী লীগের সাথে স্বৈরাচার এরশাদের সংসদে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক স্বার্থে জোটবদল করে জাতিকে বিপথে নিয়েছিল। আজও তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণে সক্রিয় ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দীর্ঘ আন্দোলনে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সরব ছিলাম। হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, কাপিটল হীল, জাতিসংঘের সামনে বছরের পর বছর নানা কর্মসূচি পালন করেছি। গত বছরের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরও বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে তারেক রহমান বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত। বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশে ফিরলেই গণতন্ত্র-বিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটবে এবং বহুল আকাঙ্খিত নির্বাচনের পথও সুগম হবে।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুর রহমান, বদরুল হক আজাদ, আনিসুর রহমান, দেওয়ান কাওসার, শেখ তারেক হাসান, মাহবুবুল হক, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দলের সভাপতি জাহাঙ্গির আলম প্রমুখ।

ছবির ক্যাপশন-বিএনপি-প্রেস-১
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন গিয়াস আহমেদ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
ছবির ক্যাপশন-বিএনপি-প্রেস-২

=========

Facebook Comments Box

Posted ১১:০০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us