নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ
এ্যান্ড্রু ক্যুমো-জোহরান মামদানি।
বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার। ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত জোহরান মামদানির (৩৪) বিরুদ্ধে লড়ছেন দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ নিউইয়র্কের সাবেক ডেমক্র্যাট গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো (৬৭) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিজ স্লিওয়াও রয়েছে দৌড়ে, তবে তার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্ট অধ্যুষিত সিটি হিসেবে নিউইয়র্কের ভোটারেরা এবার জোহরান মামদানির প্রতি ঝুঁকেছেন। এই সিটির সিংহভাগ ভোটারই ডেমক্র্যাট হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় জোহরানের বিজয় নিয়ে কোন দুশ্চিন্তার অবকাশ থাকার কথা নয়। তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জোহরানকে ‘কম্যুনিস্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ক্যুমোর প্রতি নিজের দুর্বলতার জানান দিয়েছেন। এমনকি, সর্বশেষ ২ নভেম্বর রোববার সিবিএস নিউজ টিভিতে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনরায় প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেছেন, মামদানির মত একজন কম্যুনিস্ট যদি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয় তাহলে আমার পক্ষে নিউইয়র্কের উন্নয়ন-কল্যাণের জন্যে বিপুল পরিমাণের ফেডারেল অর্থ মঞ্জুর করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, আপনারা যদি কম্যুনিস্ট শাসিত নিউইয়র্ক হন, যেখানে অর্থ বরাদ্দ করার অর্থ হবে সবকিছুকে জলে ঢালার সামিল। এ কারণেই এই নির্বাচনী তাপ নিউইয়র্ক সিটির গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকার জাতীয় রাজনীতিকেও উত্তপ্ত করেছে। একইসাথে ডেমক্র্যাটিক পার্টিতেও ‘কম্যুনিস্ট’ সংজ্ঞা নিয়ে বিভক্তির আশংকা ক্রমে প্রবল হচ্ছে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে এই প্রথম বৃহৎ কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থকগণের বিপুল সমর্থনে একজন মুসলমান অভিবাসী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দায় সর্বপ্রথম সোচ্চার হয়েছেন জোহরান। নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলীর সদস্য হিসেবে জোহরানের এই ভূমিকা নতুন প্রজন্মকেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছে। একইসাথে তার নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে সিটির ভবনসমূহের ভাড়া বৃদ্ধি না করা এবং সিটির বাস সার্ভিসকে ফ্রি করার অঙ্গিকার। শুধু তাই নয়, জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার অঙ্গিকারও রয়েছে মামদানির। মুসলিম আমেরিকান হিসেবে এই সিটির সকল মুসলমানের পাশাপাশি ভারতীয় মায়ের সন্তান জোহরানের প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক ভোটারেরই সমর্থনের পাল্লা ভারি হওয়ায় শুরু থেকেই সকল জরিপে ক্যুমোর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন মামদানি। ট্রাম্পের প্রতি ক্যুমোর দুর্বলতা থাকায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করছেন মামদানির বিরুদ্ধে। তবুও তেমন সাফল্য না আসায় মামদানি মেয়র হলে ফেডারেল অর্থ-সহায়তা থেকে নিউইয়র্ক বঞ্চিত হবে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই হুমকি শেষ মুহূর্তে কতটা প্রভাব ফেলবে ব্যালট যুদ্ধে সেটি দেখার অপেক্ষায় সকলে। তবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত গৃহিত আগাম ভোটের গতি-প্রকৃতির যে চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে তাতে নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি প্রবীন ভোটারের অংশগ্রহণও এবার অনেক বেশী ছিল। মোট ৭ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার আগাম ভোটে অংশ নিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো জানায়।
এদিকে, নির্বাচন ঘিরে এই সিটিতে এবারের মত জাগরণ সাম্প্রতিক সময়ে আর কখনো ঘটেনি। বাংলাদেশীরাও সবচেয়ে বেশী সোচ্চার মামদানির পক্ষে। তবে ক্যুমোর ক্যাম্পেইনেও দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ী-ধর্মীয় নেতাদের। ভারতীয় আমেরিকানদের বড় একটি অংশ ক্যুমোর পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউইয়র্কে ছুটে এসেছিলেন ভারতীয় আমেরিকান ককাসের কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না। শনিবার অপরাহ্নে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় মেজর মার্ক পার্কে এক নির্বাচনী সমাবেশের ফাঁকে ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই কংগ্রেসম্যান এ সংবাদদাতাকে জানান, ভারতীয় আমেরিকানদের বিভ্রান্তি দূর করতেই এসেছি। কারণ, এখোন সময় হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের উর্দ্ধে উঠে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং মামদানিকে বিজয় প্রদানের। মামদানি শুধু ভারতীয় নন, আফ্রিকানও নন, তিনি হলেন আমেরিকার নীতি-নৈতিকতার পরিপূরক কর্মকান্ডে বিশ্বাসী একজন মানুষ। তার নেতৃত্বে নিউইয়র্কবাসী আবারো ঘুরে দাঁড়াবে প্রগতির পথে, ন্যায়-নিষ্ঠ প্রশাসনের মধ্যদিয়ে খেঁটে খাওয়া অভিবাসীগণের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে এই সিটি।

মামদানির নির্বাচনী সমাবেশে কংগ্রেসম্যান খান্নার সাথে খোরশেদ খন্দকার, বদরুল খান এবং সমর্থকেরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
উল্লেখ্য, এ্যান্ড্রু ক্যুমো নিউইয়র্কের গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নারী সহকর্মীর সাথে অনৈতিক আচরণে লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠার পর পদত্যাগ করেছেন। তেমনি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তিনি অঙ্গিকার করেছেন আক্রার বাজারে নিউইয়র্ক সিটির কঠোর পরিশ্রমী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের দিনাতিপাতকে সহজ করার নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের। স্টেট গভর্ণর নির্বাচিত হবার আগে ক্যুমো ছিলেন এটর্নী জেনারেল ও যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ন মন্ত্রী। সে সব অভিজ্ঞতার বিবরণও দিচ্ছেন তার সমর্থকেরা। অপরদেকে, জোহরান হচ্ছেন স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান, তিনিও নিজের সুদূর প্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তার পক্ষে কলেজ-ভার্সিটির ৯০ হাজার শিক্ষার্থী কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। জোহরানের বিজয়ের সম্ভাবনাকে বলিষ্ঠ করেছে তরুণ সমাজের এই গ্রুপ-এমন অভিমত সচেতন ভোটারদের। নিউইয়র্কে রেজিস্টার্ড ভোটার বাংলাদেশী আমেরিকান বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম জোহরানের নির্বাচনী সমাবেশে এ সংবাদদাতাকে বললেন, জোহরান মামদানির প্রতি সকল বয়েসী মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। কারণ, তার নির্বাচনী ইশতেহারেই রয়েছে তার দূরদর্শীতার প্রমাণ। অভিবাসী সমাজে বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতাকেও জোহরান ভোটারের মন জয়ে কাজে লাগাচ্ছেন।
মূলধারার রাজনীতিক খোরশেদ খন্দকার বলেন, মামদানিকে ঘিরে তরুন সমাজের উদ্দীপনা মেয়র পদে মামদানির বিজয়কে নিশ্চিত করছে বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে যে জোয়ার তৈরী হয়েছে সমগ্র কম্যুনিটিতে, তার ফলে অনেকেই ধারণা করছেন যে, অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ব্যালট যুদ্ধে অংশগ্রহণের সংখ্যা দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগের নির্বাচনসমূহে ১০ লাখ তথা এক মিলিয়ন ভোটারের অংশ গ্রহণ ঘটেছে। এবারের গতি-প্রকৃতিতে মনে হচ্ছে ২০ লাখের মত ভোটার কেন্দ্রে আসতে পারেন-এমন অভিমত দিয়েছেন নিউইয়র্কের নির্বাচনী পরিক্রমার ওপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ রাখা জেরি স্কুমিক। তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৯৬৫ সালের মেয়র নির্বাচনে ২৬ লাখ ভোটারের উপস্থিতি ঘটেছিল।
উল্লেখ্য, জোহরান বিজয়ী হলে তিনি হবেন এই সিটির কনিষ্ঠতম মেয়র। আর ক্যুমো বিজয়ী হলে তিনি হবেন স্টেট গভর্ণরের মত পদে ১১ বছর দায়িত্ব পালনের পর নারী কেলেংকারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে পদত্যাগী একজন রাজনীতিকের মেয়র হবার প্রথম ঘটনার সাক্ষী।
Posted ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24